জি এম টিপু সুলতান , বিশেষ সংবাদদাতা : ভবদহ অঞ্চলের যশোরের মণিরামপুরের ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ সমস্ত এলাকায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় পানিতে তলিয়ে গেছে। এই সব গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দি মানুষ।
যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর, খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। এ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ বড় অসহায়। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে সবচাইতে বড় প্রকল্প অভয়নগর উপজেলা ভবানীপুর গ্রামে শ্রীনদীর ওপর নির্মিত ভবদহ স্লুইচগেট।
এই সুইচ গেট দিয়ে মূলত: এলাকার ৫৪টি বিলের পানি নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু পলি পড়ে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। এতে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে এলাকার বিলগুলো তলিয়ে গেছে। বিল উপচে পানি ঢুকেছে বিলসংলগ্ন গ্রামগুলোতে। পানিবন্দি মানুষদের কেউ কেউ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু জাযগায়।
অনেক পরিবার ঘরের মধ্যে মাচা করে সেখানে থাকছেন। মণিরামপুর উপজেলার ১৬ নং নেহালপুর ইউনিয়নের পাঁচাকড়ি গাজিপাড়া রাজবংশী পাড়া ঋষিপাড়া মধুপুর পাড়া অভয়নগরের ভিতর ভাটা ডাংগি খালবাটবিলা, ঝিকরডাঙ্গা, হরিণা কুলটিয়া ইউনিয়নের হাটগাছা, সুজাতপুর, কুলটিয়া, লখাইডাঙ্গা, মহিষদিয়া, আলীপুর, পোড়াডাঙা, পদ্মনাথপুর, পাড়িয়ালী, দহাকুলা, কুচলিয়া, পাঁচকাটিয়া, ভুলবাড়িয়া, কুমারসীমা,
কপালিয়া, রোজিপুর, নেহালপুর, বালিধা, পাচাকড়িসহ আরও কয়েকটি গ্রামের কোথাও আংশিক আবার কোথাও বেশির ভাগ বাড়িতে পানি উঠে গেছে। বছরের ১২ মাসের ৯ মাস পানি বন্ধ থাকে এসব এলাকায়। কয়েকটি এলাকা ঘুরে মানুষের চরম দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে গ্রামগুলোর শত শত বাড়িতে পানি উঠেছে। রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় এলাকার অনেক জায়গায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মণিরামপুর উপজেলায় নেহালপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ল্ডে হাফিজুর গাজী আলিম গাজি জাহাঙ্গীর গাজী ওদের বাড়িতে হাঁটু সমান পানি, বর্ষা অল্প হচ্ছে কিন্তু পানি বাড়ছেই। তারা উঠানে বাঁশের ও কাঠের সাঁকো তৈরি করেছে। সুজাতপুর গ্রামের সুকুমার দাস রাস্তা থেকে ঘরে যাতায়াতের জন্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘উঠোনে দেড় হাত আর ঘরের মধ্যে এক বিঘাত জল।
ঘরের মধ্যে ইট দিয়ে খাট উঁচু করে সেখানেই থাকছি। কিন্তু জল যেভাবে বাড়ছে তাতে বেশি দিন ঘরে থাকা যাবে না। তাই ভবদাহ এর দুপাড়ের সাধারন জনগন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে। সঠিক বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ছাড়া এই এলাকার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে না। তাই সরকার যদি সরাসরি এই এলাকার জনগণের মধ্য দিয়ে সঠিক চিন্তা চেতনায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে তাহলে ভবদহের অভিশাপ একদিন আশীর্বাদে পরিণত হবে।